শয়তান অর্থ বিতাড়িত, বিদূরিত, বঞ্চিত ইত্যাদি। শয়তান হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যাণ থেকে বঞ্চিত বলে তাকে শয়তান বলা হয়। পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে তার প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ শয়তানের খাদ্য হলো, হাড়, গোবর ইত্যাদির ঘ্রাণ, বিসমিল্লাহবর্জিত খাদ্য, তার পানীয় হলো মদ, শিকারের ফাঁদ হলো নারী, বার্তাবাহক হলো গণক, কিতাব হলো অশ্লীল কল্পিত গ্রন্থাবলি, কথা হলো মিথ্যা, মুয়াজ্জিন হলো বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র, উপাসনালয় হলো বাজার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, শয়তান তা নিজের জন্য বৈধ মনে করে।’

আল্লাহ যখন শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেন তখন শয়তান চারটি বিষয়ের আবেদন করে। তা হলো–

১. আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন লাভ। আল্লাহ তার এ প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহর বাণী, ‘ইবলিস বলল, আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সুযোগ দিন, আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি সুযোগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫)

২. আমার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ আবেদনও কবুল করা হয়।

৩. আমাকে মানুষের দৃষ্টিশক্তির অন্তরাল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটিও কবুল করা হয়।

৪. আমি যেন মানবদেহের শিরা-উপশিরায় চলাচল করতে পারি। এ দোয়াও কবুল করা হয়।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৭৪)

শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার বিভিন্ন ধরনের আমল কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—

১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা : আল্লাহ বলেন, ‘যখন কোরআন পাঠ করো তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো (আউজুবিল্লাহ পাঠ করো)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৮)

অনুরূপ সুবহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, আল্লাহ আকবার, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি পাঠের কথাও এসেছে।

২. কাজে কর্মে সতর্কতা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘সূর্যাস্তের পর আধাঘণ্টা পর্যন্ত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখবে এবং বাচ্চাদের ঘরের বাইরে যেতে দেবে না। কারণ এ সময় শয়তান চলাচল করে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি)

৩. ভালো প্রবণতাকে প্রাধান্য দেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আদমসন্তানের ওপর শয়তানের একটি প্রভাব আছে। অনুরূপ ফেরেশতারও একটি প্রভাব আছে। শয়তানের প্রভাব হলো, অকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আর ফেরেশতার প্রভাব হলো, কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন জেনে রাখে, এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। কাজেই তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে, সে যেন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ আয়াত পাঠ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার প্রতি নির্দেশ দেয়।’ (সুনানে তিরমিজি)

৪. নামাজে মনোযোগ সৃষ্টি : উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে আরজ করি, হে আল্লাহর রাসুল! শয়তান আমার ও আমার নামাজ-কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং তাতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘তুমি যখন তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন তার কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাঁ দিকে তিনবার থুতু ফেলবে।’ (মুসলিম)

 

কলমকথা/সাথী